শনিবার, ১৮ মে ২০২৪, ০২:৪৫ অপরাহ্ন

৫০ বছরের রেকর্ড যেভাবে ভেঙে দেন ব্যারিস্টার সুমন

নুরুল আমিন, চুনারুঘাট (হবিগঞ্জ) থেকে ,  ৪৩ বছর পর হবিগঞ্জ-৪ আসনটি আওয়ামী লীগের হাতছাড়া হলো। হেভিওয়েট প্রার্থী বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী এডভোকেট মো. মাহবুব আলীকে বিপুল ভোটের ব্যবধানে পরাজিত করেন অনলাইন সেলিব্রেটি, তরুণ রাজনীতিবিদ ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক। এর ফলে দীর্ঘ ৪৩ বছরের ইতিহাস পরিবর্তন হলো। ১৯৭৫ সালে রাজনীতির পট-পরিবর্তনের পর আসনটি দখলে নেন জাতীয় পার্টির সৈয়দ মো. কায়সার। বিএনপি সরকারের আমলে কয়েক মাসের জন্য আসনটি ছিল বিএনপি’র সৈয়দ মো. ফয়সলের অধীন।

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে হবিগঞ্জ-৪ সংসদীয় আসনে নৌকার টিকিট পান প্রতিমন্ত্রী মাহবুব আলী। এর কিছুক্ষণ পরেই সৈয়দ সুমন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে স্বতন্ত্র প্রার্থিতা ঘোষণা করেন এবং রাতে চুনারুঘাট মধ্য বাজারে এক পথসভায় প্রার্থিতা নিশ্চিত করে কর্মীদের প্রচারে নামার আহ্বান জানান। ঘোষণার পর যুবসমাজের সিংহভাগ অংশ সৈয়দ সুমনের জন্য প্রচারে নেমে পড়ে। প্রবাসীদের ৯৫ শতাংশ সুমনের পক্ষে ফেসবুক গরম করে রাখে। সৈয়দ সুমন চুনারুঘাট পৌর শহরে তার নিজস্ব বাসায় কর্মীদের খাবারের ব্যবস্থা করেন। সেটা চলে নির্বাচনের দিন পর্যন্ত।

দলমত নির্বিশেষে যুবাদের সিংহভাগ প্রচারে নামে। বিগত ১৫ বছর ধরে ব্যারিস্টার সুমন  ফুটবল একাডেমি গঠন করে তরুণদের মনে জায়গা করে নেন।

তিনি ‘৯৫ ব্যাচ’ নামে একটি গ্রুপ খুলেন ফেসবুকে। এই গ্রুপে চুনারুঘাট মাধবপুর তথা সারা দেশের শিক্ষার্থীরা যোগ দেন। এই ৯৫ গ্রুপের সদস্যরা নানাস্থানে নানা ধরনের অনুষ্ঠান আয়োজন করতো, সুমনের গুণগান প্রচার করতো। অপরদিকে ব্যারিস্টার সুমন ফেসবুক লাইভে পুল কালভার্টের চিত্র তুলে ধরেন এবং প্রবাসীদের দান করা টাকা দিয়ে অর্ধশতাধিক পুল কালভার্ট নির্মাণ করে মানুষের নজরে আসেন। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সৈয়দ সুমন প্রচারেও ব্যতিক্রমী সিদ্ধান্ত নেন। প্রচার মাঠে তিনি একা বক্তৃতা দিয়েছেন। কাউকে তিনি মঞ্চে উঠতে দেননি, তার পাশে কাউকে দাঁড়াতে দেননি। সুমনের পক্ষে প্রচারে শামিল হন অনলাইন সেলিব্রেটি মাওলানা তাহেরী, চিতল মুখলিছ, শুক্কুর আলী। ওয়াজের মাহফিলগুলোতে ব্যারিস্টার সুমন সমানে অংশ নেন। প্রচার মাঠে তিনি যুবসমাজকে নানা ধরনের প্রতিশ্রুতি দিয়ে আকৃষ্ট করেন। তিনি বলেন, চুনারুঘাট-মাধবপুরকে তিনি এমনভাবে সাজাবেন, অন্য জেলার মানুষ এখানে মেয়ে বিয়ে দেয়ার জন্য পাগল থাকবে। প্রতিটা ইউনিয়নে তিনি খেলার মাঠ নির্মাণ করবেন। যুবকদের বেকারত্ব দূর করবেন। কোনো রাস্তা উন্নয়নের বাকি থাকবে না। এলাকাকে সারা বিশ্বে মডেল হিসেবে দাঁড় করাবেন। সৈয়দ সুমনের সম্মোহনী কথায় আবাল-বৃদ্ধ-বনিতা হুমড়ি খেয়ে পড়েন। ৭ই জানুয়ারির নির্বাচনে গড়ে ৯০ শতাংশ ভোট তিনি ভাগিয়ে নিতে সক্ষম হন। চা বাগান থেকে শুরু করে গ্রাম অব্দি মাইনোরটি ভোটের ৭০ শতাংশ ভোট তিনি ঈগল মার্কার পক্ষে আদায় করে নেন। ভেঙে দেন ৫০ বছরের ইতিহাস। চুনারুঘাট ও মাধবপুর উপজেলা নিয়ে গঠিত হবিগঞ্জ-৪ আসন।

এ আসনে মোট ভোটার রয়েছেন ৫ লাখ ১০ হাজার ৭২০ জন। এ আসনে বরারবই আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এ কারণে এ আসনে দলের একাধিক নেতা মনোনয়ন পাবার আশায় চেষ্টা তদবির করে থাকেন। দু’টি উপজেলা সীমান্ত ও চা বাগানঘেরা। তবে চুনারুঘাট উপজেলায় রয়েছে ২২টি চা বাগান এবং মাধবপুর উপজেলায় আছে ৪টি চা বাগান। চা বাগানের মোট ভোটে ৯০ শতাংশ ভোট নৌকার বাক্সেই যায়। নতুন একটি ইতিহাস গড়ার শপথ নিয়েছেন চুনারুঘাটের সন্তান সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন। যে চ্যালেঞ্জ তিনি ছুড়ে দিয়েছেন সেটার বাস্তবায়ন করতে পারবেন কিনা তা ভবিষ্যৎই বলে দেবে- এমনটাই মনে করেন বিশ্লেষকগণ।

 

 

এই নিউজটি আপনার ফেসবুকে শেয়ার করুন

© shaistaganjerbani.com | All rights reserved.